মেগার কি? কত প্রকার? মেগারের গঠন ও কার্যপ্রণালী

 

মেগার মিটার

হ্যালো ইন্জিনিয়ারস, আমাদের আজকের শিরোনাম “মেগার কি? কত প্রকার? মেগারের গঠন ও কার্যপ্রণালী ও ব্যবহার” এর লেখাতে আপনাকে স্বাগতম। ‍আজ আমরা যে সকল বিষয়ে আলোচনা করব তা হল:-  মেগার কি? কাকে বলে? মেগার কত প্রকার ও কি কি? মেগারের গঠন ও কার্যপ্রণালী। মেগারের ব্যবহার। মেগার ভালো না খারাপ তা কিভাবে পরিক্ষা করা হয়? কিভাবে মেগার দ্বারা উচ্চ রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ করতে হয়? ইত্যাদি বিষয়।

মেগার কি? কাকে বলে?

মেগার একটি পারমানেন্ট ম্যাগনেট মুভিং কয়েল টাইপ ইনস্ট্রুমেন্ট, যার সাহায্যে বৈদ্যুতিক বর্তনী, মেশিন, ট্রান্সফর্মার ইত্যাদির ইন্সুলেশন রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ করা হয়। 

মেগারকে একটি হস্ত চালিত জেনারেটরও বলা হয়। মেগার ১৮৮৯ সাল হতে ব্যবহার হয়ে আসছে। তবে ১৯২০ সালের পর থেকে এর ব্যবহার ও জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এরই ধারাবাহিতায় বর্তমানে অনেক আধুনিক অপশনসহ বিভিন্ন সংস্করণের মেগার বাজারজাত হচ্ছে যা এর প্রয়োগ এবং ব্যবহারকে আরও সহজ করে তুলেছে।

মেগার কত প্রকার ও কি কি?

ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করেই মেগারকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।

  • (ক) ইলেকট্রনিক মেগার:- ইলেকট্রনিক মেগার একটি ব্যাটারী চালিত ডিজিটাল ডিসপ্লে সমন্বয়ে গঠিত হয়ে থাকে। এছাড়াও ইন্সুলেশন পরিমাপের জন্য দুটি নব বা লিড থাকে থাকে। আর একটি সিলেকশন সুইচ থাকতে পারে, যার সাহায্যে রেঞ্জ সিলেক্ট করা যায়। অনেক আধুনিক মেগার আছে যা অটো সিলেক্ট হিসেবে কাজ করে। তাই সেগুলোতে সিলেকশনের জন্য আলাদা কোন সুইচ থাকে না।
  • (খ) ম্যানুয়াল মেগার:- এই যন্ত্রে একটি ডিসি জেনারেটর ও একটি ওহম মিটার থাকে। ডিসি জেনারেটর সাধারণত হস্তচালিত হয়ে থাকে। এছাড়া একটি ক্লাচের ব্যবস্থা থাকে যাতে হস্ত চালিত জেনারেটরটি নির্দিষ্ট টেস্টিং কারেন্ট উৎপাদন করতে পারে। বিভিন্ন রেঞ্জ সিলেট করার জন্য একটি সিলেক্টর সুইচ থাকে এবং ইনসুলেশন পরিমাপ করার জন্য দুটি নব বা লিড থাকে।

মেগার কি? মেগার কাকে বলে? মেগার কত প্রকার ও কি কি? ‍এই প্রশ্নগুলোর উত্তর ‍আশা করি পেয়েছেন। চলুন এবার মেগারের গঠন ‍সমদ্ধে জেনে ‍আসি। 

মেগারের গঠন ও কার্যপ্রণালী

মেগারের গঠনপ্রণালী - Construction of a Megger Bangla

চিত্রঃ মেগার মিটারের গঠন


মেগার একটি পারমানেন্ট ম্যাগনেট মুভিং কয়েল টাইপ ইনস্ট্রুমেন্ট, যার পারমানেন্ট ম্যাগনেটের পোল পিসগুলো প্রজেক্টেড হর্ন টাইপ এবং কেন্দ্রীয় আয়রন কোরটি বিশেষ আকৃতির হয়ে থাকে। ডিফ্লেকটিং কয়েলটি কন্ট্রোল কয়েলের সাথে সমকোণে অবস্থিত এবং পারমানেন্ট ম্যাগনেটের ফিল্ডের মধ্যে মুক্তভাবে ঘুরতে পারে। উভয় কয়েলই হস্তচালিত একটি ডিসি জেনারেটরের আড়াআড়িতে সংযুক্ত থাকে। কন্ট্রোল কয়েলের সাথে অপর একটি কয়েল (কম্পেনসেটিং কয়েল) সিরিজে সংযুক্ত করা হয় এবং এরা আবার একটি স্থির মানের রেজিস্ট্যান্সের (R) সাথে সিরিজে সংযুক্ত থাকে।

যে রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ করতে হবে, তা ডিফ্লেকটিং কয়েলের সাথে সিরিজে সংযুক্ত করতে হয়। কন্ট্রোল কয়েল এবং কম্পেনসেটিং কয়েন্স সিরিজে সংযুক্ত করা হয়ে থাকে, যাতে এদের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত কারেন্টসমূহ বিপরীতমুখী হয়। যা (ক) চিত্রে ‘ক্রস’ এবং ‘ডট’ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে।

কয়েল দু’টির সন্নিহিত পার্শ্বগুলোতে কারেন্টসমূহের নির্দেশ একই দিকে দেখানো হয়েছে। এর ফলে একটি ঘূর্ণনের সৃষ্টি হয়, যখন এই পার্শ্বগুলো দক্ষিণ মেরুর শৃঙ্গ এবং কেন্দ্রীয় আয়রন কোরের মাঝখানে এয়ার প্যাপের ফিল্ডে প্রবেশ করে। (খ নং-চিত্র দ্রষ্টব্য)। আশা করি মেগারের গঠনপ্রণালি বুঝতে পেরেছেন।



মেগারের কার্যপ্রণালি - Working principle of a Megger Bangla

যেহেতু মেগারের কন্ট্রোল  কয়েল (Control Coil) এবং কম্পেনসেটিং কয়েল (CompensettingCoil) সিরিজ-রেজিস্ট্যান্সসহ জেনারেটরের প্রান্তদ্বয়ের আড়াআড়িতে সংযোগ করা হয়। সেহেতু এই কয়েলগুলোর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত কারেন্ট পরীক্ষাকৃত সার্কিটে প্রয়োগকৃত ভোল্টেজের সাথে সরাসরি সমানুপাতিক হয়ে থাকে। যখন ডিফ্লেকটিং কয়েলে কোনো কারেন্ট প্রবাহিত হয় না, (ক নং চিত্র) তখন কন্ট্রোল কয়েল একটি নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করে। এই অবস্থায় টর্ক শূন্য হয়। এ অবস্থায় পয়েন্টারের অবস্থান স্কেলের এক প্রান্তে এবং তখন এর টর্ক শূন্য হয়। এ অবস্থায় পয়েন্টারের অবস্থান স্কেলের এক প্রান্তে এবং এটা ‘∞’ (অসীম) চিহ্ন দ্বারা চিহ্নিত থাকে। যা পরীক্ষাকৃত সার্কিটের অসীম রেজিস্ট্যান্স নির্দেশ করে।

যখন ডিফ্লেকটিং কয়েলের মধ্য দিয়ে কারেন্ট প্রবাহিত হয়, তখন একটি ঘূর্ণনের সৃষ্টি হয়। যা কয়েল এবং পয়েন্টারকে দক্ষিণাবর্তে (Clockwise direction) ঘুরায়। এই ঘূর্ণনের ফলে কন্ট্রোল কয়েল দক্ষিণ মেরুর ফিল্ডে প্রবেশ করে। ফলে বামাবর্তে (Anticlockwise direction) একটি কন্ট্রোলিং টর্কের সৃষ্টি হয়। সাম্যাবস্থা পাওয়া যায় তখন, যখন ডিফ্লেকটিং টর্ক, কন্ট্রোলিং টর্কের সমান হয়। আশা করি মেগারের কার্যপ্রণালী বুঝতে পেরেছেন। 

মেগারের ব্যবহার - Uses of Megger

মেগার একটি বহনযোগ্য রেজিস্ট্যান্স মাপার যন্ত্র যা ইলেকট্রিক্যাল কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ইনসুলেটরের রেজিসট্যান্স পরিমাপ করার জন্য ব্যবহার করার হয়। আদ্রতা, তাপ, চাপ এবং ধুলোবালির প্রভাবে বিভিন্ন ইলেকট্রিক ইকুইপমেন্টের ইন্সুলেশন ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। তাই বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য নিয়মিত ইন্সুলেশন পরিমাপ করতে মেগার ব্যবহৃত হয়।

যদিও মেগারের সাহায্যে শূন্য হতে অসীম মানের মধ্যে অবস্থিত সকল রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ করা যেতে পারে, তথাপি এটি একটি উচ্চমানের রেজিস্ট্যান্স পরিমাপক যন্ত্র। কারণ এর স্কেলের প্রথম দাগ শূন্য এবং দ্বিতীয় দাগ 1 কিলোওহম। ফলে অল্পমানের রেজিস্ট্যান্স মেগার দ্বারা পরিমাপ করা অসম্ভব ব্যাপার।

নিম্নে মেগারের ব্যবহার উল্লেখ করা হলো:-

(ক) ইনসুলেশন রেজিস্ট্যান্স পরিমাপের জন্য মেগারের ব্যবহার করা হয়।

(খ) কন্টিনিউইটি পরীক্ষার জন্য মেগারের ব্যবহার করা হয়।

(গ) শর্টসার্কিট টেস্ট করার জন্য মেগারের ব্যবহার করা হয়।

(ঘ) সুইচ বা ফিউজের পোলারিটি করার জন্য মেগারের ব্যবহার করা হয়।

মেগার ভালো না খারাপ তা কিভাবে পরিক্ষা করা হয়?

কন্টিনিউইটি টেস্টের সাহায্যে মেগার ভালো না খারাপ তা  পরিক্ষা করা হয়। কোনো ক্যাবল বা তারের পরিবাহী এবং কোনো সার্কিটের কোথাও কোনো ফাঁক বা গ্যাপ আছে কি না বা ভেঙ্গে গিয়েছে কি না, তা এই কন্টিনিউইটি টেস্টের সাহায্যে জানা যায়।

কোনো ক্যাবল বা তারের পরিবাহীর দু’ প্রান্ত মেগারের দু’ প্রান্তের সাথে সংযোগ করে মেগারের হাতল ঘুরালে যদি শূন্য পাঠ দেখায়, তবে পরিবাহীর কোথাও ভাঙ্গা বা ফাঁকা নেই বুঝতে হবে।

যদি অসীম বা কোনো পাঠ দেখায়, তবে পরিবাহীর কোথাও ভাঙ্গা বা ফাঁকা আছে। মিটারের হাতল ঘুরানোর পরেও মিটারের কাটা যদি শূন্য বা অসীম পাঠ না দেয়, তবে মেগার মিটার নষ্ট।

মেগারে গার্ড রিং এর কাজ কি?

স্যাতসেঁতে ও ধুলাবালিযুক্ত পরিবেশে যখন মেগার ব্যবহার করা হয়, তখন ইনস্ট্রুমেন্টের বহির্ভাগে জমাকৃত ধূলিকণার মধ্য দিয়ে লিকেজ পথ গঠিত হয়। ফলে ‘আর্থ লিকেজ কারেন্ট’ প্রবাহিত হতে পারে, যেখান হতে এটা ডিফ্লেকটিং কয়েলে প্রবেশ করে। ফলে বিক্ষেপ বাধাগ্রস্ত হয় ও ভুল পাঠ দেয়।

এই পরিস্থিতি এড়ানোর জন্যে ‘লাইন’ প্রান্তের চতুর্দিকে একটি ধাতব ‘গার্ড-রিং’ দেয়া হয়, যা জেনারেটরের ‘নেগেটিভ’ প্রান্তের সাথে সরাসরি যুক্ত থাকে। যদি কোনো কারেন্ট ‘লিকেজ হয়, তবে ‘লাইন’ প্রান্ত দিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে ‘গার্ডরিং-এর সাহায্যে সরাসরি জেনারেটরে ফিরে যাবে, ফলে ইনস্ট্রুমেন্টের বিক্ষেপ বাধহস্তেহীন থাকবে।

কিভাবে মেগার দ্বারা উচ্চ রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ করতে হয়?

মেগারের ডিসি জেনারেটরের হাতল ঘুরালে যে ভোল্টেজ উৎপন্ন হয়, একে একটি স্থির মানের রেজিস্ট্যান্সের (R) মধ্য দিয়ে ভোল্টেজ কয়েলের (কন্ট্রোল কয়েল) আড়াআাড়িতে এবং একটি কারেন্ট নিয়ন্ত্রক রেজিস্ট্যান্সের (R) মধ্য দিয়ে ডিক্লেকটিং কয়েলের আড়াআড়িতে প্রয়োগ করা হয়। পরিমাপকৃত রেজিস্ট্যান্স টেস্টিং প্রান্তদ্বয়ের (E & L) আড়াআড়িতে সংযোগ করা হয়।

প্রকৃতপক্ষে, কয়েল দু’টি একটি ইনট্রুমেন্টের মধ্যে একটি মুভিং কয়েল ডোল্টমিটার এবং একটি অ্যামিটার ছাড়া আর কিছুই নয়।

(ক) ধরা যাক, (E & L) প্রাপ্তদ্বয় ওপেন সার্কিট’। এখন জেনারেটরের হাতলটি ঘুরালে যে ভোল্টেজ উৎপন্ন হবে, তা কয়েল B-এর আড়াআাড়িতে প্রয়োগ করা হলো। ফলে কয়েল B-এর মধ্য দিয়ে কারেন্ট প্রবাহিত হবে, কিন্তু কয়েল A-এর মধ্য দিয়ে কোনো কারেন্ট প্রবাহিত হবে না। এর ফলে যে টর্ক উৎপন্ন হবে, তা মেগারের মুভিং কয়েলকে ঘুরাবে, যে পর্যন্ত না পয়েন্টারটি স্কেলের ‘∞’ (অসীম) দাগে পৌছে। তা এরূপ নির্দেশ করে যে, বহিসার্কিটের রেজিস্ট্যান্স ইনস্ট্রুমেন্টের পরিমাপের জন্যে অত্যন্ত বেশি।

(খ) যদি টেস্টিং প্রান্তদ্বয় (E & L.) একটি অত্যন্ত কম মানের রেজিস্ট্যান্স দ্বারা বন্ধ করা হয় অথবা শর্টসার্কিট করা হয়। তবে অত্যন্ত বেশি কারেন্ট ডিয়েকটিং কয়েল A-এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হবে। কয়েল A দ্বারা সৃষ্ট ডিক্লেকটিং টর্ক, কয়েল B দ্বারা সৃষ্ট টর্কের বিপরীত দিকে হবে। ফলে লব্ধি টর্ক মুভিং কয়েলকে এমনভাবে ঘুরাবে, যে পর্যন্ত না পয়েন্টারটি স্কেলের ‘শূন্য’ দাগে আসে। তা এরূপ নির্দেশ করে যে, বহিঃসার্কিটের রেজিস্ট্যান্স ইনস্ট্রুমেন্টের পরিমাপের জন্যে অত্যন্ত ক্ষুদ্র। তো আজ এই পর্যন্তই। কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে জানান। 

Post a Comment

Previous Post Next Post