অনুচ্ছেদ রচনা: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ


এই আর্টিকেলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ অনুচ্ছেদ সকল শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য বাংলা ভাষায় লিখা হয়েছে। যেন সকল ছাত্রছাত্রীরা সহজে মনে রাখতে পারে এবং এটি পরিক্ষায় লিখে ভালো একটি ফলাফল অর্জন করতে পারে। আরও পড়ুন, অনুচ্ছেদ : দেশপ্রেম বা স্বদেশপ্রেম (সহজ ভাষায় ছোট রচনা)

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ : অনুচ্ছেদ রচনা

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তথা বর্তমান বাংলাদেশের জনগণ নির্যাতিত হয়ে আসছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর হাতে। ১৯৫২ সালে বাংলা ভাষা নিয়ে ষড়যন্ত্র, ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকার ভেঙে দেওয়া, ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন, ১৯৭০ সালে নির্বাচনের পর ক্ষমতা হস্তান্তর না করার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসহযোগ আন্দোলন ও স্বাধীনতার ডাক দেন। অসহযোগ আন্দোলন তুঙ্গে উঠলে পাকিস্তান সরকার নির্মম হয়ে ওঠে। ২৫শে তদানীন্তন সামরিক একনায়ক জেনারেল ইয়াহিয়া খান পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে লেলিয়ে দেয় নিরীহ বাঙালিদের ওপর। রাতের আঁধারে তারা নিষ্ঠুরভাবে গণহত্যার ঘটনা ঘটায়। ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এ ঘোষণার পরেই তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে আটক করা হয়। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দেশের মধ্যে হত্যা ও ধ্বংসের রাজত্ব কায়েম করে। বাঙালি পুলিশ ও সেনারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে দেশকে মুক্ত করার লক্ষ্যে ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক ও রাজনৈতিক কর্মীরা মুক্তিবাহিনীতে যোগদান করে। তারা যুদ্ধকৌশল, অস্ত্রচালনা ও বিস্ফোরক ব্যবহার সম্পর্কে দেশের ভেতরে ও প্রতিবেশী ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। অংশ নেয় দেশের সর্বস্তরের মানুষ। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি বাহিনী। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) তারা আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।

 

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ অনুচ্ছেদ আরেকবার সংগ্রহ করে দেয়া হলো

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ হল বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য একটি অনিবার্য বিষয়ের নাম। ২৫ মার্চে ১৯৭১ সালের মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সর্বাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে এদেশের নিরীহ ঘুমন্ত মানুষের ওপর অতর্কিত হামলা শুরু করলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ডাক দেন। বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতার এই ঘোষণায় উজ্জীবিত হয়ে এ দেশের সকল মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ছাত্র, শিক্ষক, শিল্পী-সাহিত্যিক, কৃষক, শ্রমিক, যুবকসহ নানা পেশার মানুষের সাথে বাঙালি সেনা, ই.পি.আর, পুলিশ, আনসারের সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। এদেশের সকল স্তরের মানুষ নানাভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য-সহযোগিতায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসেছিল। পাকিস্তানি সেনা ও তাদের এদেশীয় দোসরদের নির্বিচার হত্যা, অত্যাচার-নির্যাতন, ও ধ্বংসযজ্ঞের কারণে কোটি মানুষ শরণার্থী হিসেবে ভারতে আশ্রয় নেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণসহ নানাভাবে ভারত আমাদের সাহায্য-সহযোগিতা করেছিল। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার নেতৃবৃন্দ, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিক, সাংবাদিকসহ সচেতন মানুষ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নানাভাবে সহায়তা করেন। মুক্তিযোদ্ধারা গেরিলা ও সম্মুখ যুদ্ধে হানাদারদের বিভিন্ন সেক্টরে পরাজিত ও হত্যা করতে থাকে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে যৌথবাহিনীর প্রবল আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পরাজিত হয়ে পালাতে থাকে ঢাকার দিকে। অবশেষে ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ৯৩ হাজার সেনা যৌথবাহিনীর কাছে সম্পূর্ণভাবে পরাজিত হয় এবং আত্মসমপূর্ণ করে। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাধ্যমে পৃথিবীর বুকে জন্ম নেয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের নাম। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সম্যকভাবে জ্ঞান থাকা অবশ্য কর্তব্য।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ একই অনুচ্ছেদ আরেকবার দেয়া হলো

১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি অর্জন করে তাদের স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল যে চেতনাকে কেন্দ্র করে তারই নাম মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। ত্রিশ লক্ষ শহীদের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে যে স্বাধীনতা তাকে চিরউন্নত রাখতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের প্রেরণা জোগাবে চিরদিন। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন হতে মুক্তি লাভ করলেও প্রকৃত মুক্তি আসেনি বাঙালি জাতির। ১৯৫২ সালে বাংলা ভাষার ওপর আঘাত, ৫৮ সালে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬৬ সালের ৬ দফা, ৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানসহ বিভিন্ন গণ-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলন। সর্বোপরি ১৯৭০ সালের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও পাকিস্তানিরা ক্ষমতা হস্তান্তর করতে গড়িমসি শুরু করেছিল। তখনই শুরু হয় স্বাধীনতা আন্দোলন। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আক্রমণ চালায়। হত্যা, লুটপাট, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ নানা ধরনের বর্বরতা চালায় সারাদেশে। তখন বাংলার মানুষ পাকিস্তানিদের অপতৎপরতা রুখে দেয়। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ চলে। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করলে বিজয় লাভ করে বর্তমান বাংলাদেশ। ৩০ লক্ষ শহীদের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত রক্তক্ষয়ী যুদ্ধই হল আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের চেতনা, আমাদের ঐতিহ্য - একে ভুলুণ্ঠিত করা যাবে না।

আরও পড়ুনঃ

পোস্ট ট্যাগ

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ অনুচ্ছেদ রচনা, অনুচ্ছেদ রচনা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, অনুচ্ছেদ রচনা : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ।

 

Post a Comment

Previous Post Next Post