![]() |
নাওয়াইতু আন্ আতাওয়াজ্জায়া লিরাফয়িল হাদাছি, ওয়াসতি বাহাতাললিচ্ছলাতি ওয়া তাকাররুবান ইল্লাল্লাহি তায়ালা। |
ওযূ কী?
পাক-পবিত্রতা অর্জনের জন্য শরীয়তের হুকুম মত পাক পানি দিয়ে শরীরের নিদিষ্ট কিছু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ,যেমন-হাত,পা,মুখমণ্ডল শরীয়তের রীতি-নীতি অনুযায়ী ধৌত করা এবং মাথা কমপক্ষে চারভাগের এক ভাগ মাসেহ্ করাকে ওযূ বলে।
ওযূর পানি
পবিত্র পানি দিয়ে অজু করতে হয়। যেমনঃ-
১. বৃষ্টির পানি।
২. কূয়ার পানি।
৩. ঝর্ণার, সাগর, নদীর পানি।
৪. বরফ গলা পানি।
৫. বড় পুকুর বা টেঙ্কের পানি।
৬. টিউবলের পানি।
যেই সব পানি দিয়ে অজু করা যাবে না তা হলোঃ
১. অপরিচ্ছন্ন বা অপবিত্র পানি।
২. ফল বা গাছ নিসৃতঃ পানি।
৩. কোন কিছু মিশানোর কারণে যে পানির বর্ণ,গন্ধ,স্বাদ এবং গারত্ব পরিবর্তিত হয়েছে।
৪. অল্প পরিমাণ পানি: যাতে অপবিত্র জিনিস মিশে গেছে (যেমনঃ মূত্র,রক্ত,মল বা মদ)।
৫. অজু বা গোসলের জন্য ব্যবহৃত পানি।
৬. অপবিত্র (হারাম)প্রাণী,যেমনঃ শূকর,কুকুর ও আন্যান্য হিংস্র প্রানীর পান-কৃত পানির আবশিষ্ট।
ওযূর নিয়মাবলী
অজু সঠিক নিয়মে না হলে নামাজ আদায় হয় না। সুতরাং সুন্নাত তরীকায় অজু করার নিয়ম জানা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অজুর কতিপয় নিয়মগুলো নিম্নরুপঃ
নিয়ত
আমি পবিত্রতা অর্জন করা বা ইবাদাত করা অথবা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার জন্য অজু করছি।
ওযূর নিয়ম
প্রথমে উভয় হাতের কবজি পর্যন্ত ধোয়া
ডান হাতে পানি নিয়ে ডান হাতের কবজি তিনবার ধৌত করবে। এরপর ডান হাতে পানি নিয়ে বাম হাতের কবজির উপর পানি ফেলে তিন বার ধৌত করবে। হাতে নাপাকী থাকলে যে কোন উপায়ে প্রথমে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
মিসওয়াক করা
কুলি করার পূর্বে মিসওয়াক করা সুন্নাত। মিসওয়াক অজু শুরু করার পূর্বেও করা যায়। মিসওয়াক না থাকলে কিংবা মুখে ওজর থাকলে বা দাঁত না থাকলে আঙ্গুল দিয়ে হলেও ঘষে নিবে।
কুলি করা
ডান হাতে পানি নিয়ে কুলি করবে। রোজাদার না হলে গড়গড়া করা সুন্নাত। তিনবার কুলিকরা সুন্নাত। তিনবারের জন্য আলাদা আলাদা তিনবার পানি নিতে হবে।
নাকে পানি দেওয়া
ডান হাতে নাকে পানি দিবে এবং বাম হাত দ্বারা নাক ঝাড়বে। বাম হাতের কনিষ্ঠাঙ্গুলের অগ্রভাগ দিয়ে নাক পরিষ্কার করবে। তাছাড়া কনিষ্ঠ ও বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়েও নাক পরিষ্কার করা যায়। তিনবার নাকে পানি দেওয়া সুন্নাত। রোজাদার না হলে নাকের নরম স্থান পর্যন্ত পানি পৌঁছানো উত্তম। নাকে অলংকার এবং হাতে আংটি থাকলে তা নাড়া- চাড়া করে নিচে পানি পৌঁছে দেওয়া ওয়াজিব।
মুখমন্ডল ধোয়া
★★ উভয় হাতে পানি নিয়ে সমস্ত মুখমণ্ডল ধৌত করবে। অর্থাৎ কপালের চুলের গোড়া থেকে থুতনীর নিচ এবং উভয় কানের লতি পর্যন্ত এমনভাবে পানি পৌঁছানো, যাতে উক্ত অঙ্গ থেকে পানি ফোঁটা ফোঁটা নিচে গড়িয়ে পড়ে।একবার ধোয়া ফরজ, তিনবার ধোয়া সুন্নাত।
★★দাড়ি ও গোঁফ খুব ঘন হলে শুধু ধোয়া ফরজ। চামড়ায় পানি পৌঁছানো ফরজ নয়।দাড়ির ভেতরে আঙ্গুল চালিয়ে খিলাল করে নিবে।
★★ উভয় হাত কনুইসহ ধৌত করবে। একবার ধোয়া ফরজ, তিনবার ধোয়া সুন্নাত। হাতধোয়ার সময় আঙ্গুল খিলাল করবে, যাতে আঙ্গুলের গোড়ায় পানি পৌঁছে যায়। অর্থাৎ এক হাতের আঙ্গুল অপর হাতের আঙ্গুল সমূহের মধ্যে প্রবেশ করাবে।
★★ কারো আঙ্গুলের মধ্যে যদি ফাঁক না থাকে এবং আঙ্গুলের সাথে অপর আঙ্গুল এমনভাবে লেগে থাকে যার কারণে আঙ্গুলের সাথে পানি না পৌঁছার আশঙ্কা থেকে যায়, এঅবস্থায় খিলাল করা ওয়াজিব।
মাথা মাসেহ করা
মাথার চারভাগের একভাগ মাসেহ করা ফরজ, সমস্ত মাথা মাসেহ করা সুন্নাত।
মাথা মাসেহের নিয়ম
বৃদ্ধ ও তর্জনী আঙ্গুলদ্বয় ব্যতীত অবশিষ্ট উভয় হাতের আঙ্গুলের পেট মাথার মধ্যভাগে সামনে হতে পিছন দিকে টেনে নিয়ে যাবে। অতঃপর দুই হাতের তালু মাথার দুই পাশে রেখে পেছন দিক থেকে সামনে টেনে নিয়ে আসবে।
কান মাসেহ করা
উভয় হাতের বৃদ্ধ আঙ্গুলের পেট দ্বারা দুই কানের পেছনের অংশ মাসেহ করা। এরপর কনিষ্ঠ আঙ্গুলের অগ্রভাগ দ্বারা কানের ছিদ্র এবং তর্জনী আঙ্গুলের সাহায্যে কানের পাতার ভেতরে অংশ মাসেহ করা সুন্নাত।
গর্দান মাসেহ করা
উভয় হাতের তিন আঙ্গুলের পিঠ দ্বারা গর্দান মাসেহ করবে। গলা মাসেহ করবে না।
গোড়ালী ও টাখনুসহ পা ধোয়া
ডান হাত দিয়ে পায়ের অগ্রভাগে পানি ঢালা সুন্নাত। বাম হাত দিয়ে পায়ের সামনে পেছনে এবং তলদেশ মর্দন করবে। পা দিয়ে পা ঘষে এবং বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুল দিয়ে পায়ের আঙ্গুলসমূহ খিলাল করে নিবে।
বিঃদ্রঃ অজুর শেষে কালিমায়ে শাহাদাত্ পড়া মুস্তাহাব।
ওযূর ফরজ কয়টি
ওযুর ফরয ৪টি-যথাঃ
১. সম্পূর্ন মুখমন্ডল একবার ধোয়া।
২. দুই হাতের কনুই পর্যন্ত একবার ধোয়া।
৩. মাথার চারভাগের একভাগ মসেহ করা।
৪. দুই পায়ের টাকনু-সহ ধৌত করা এবং একবার করে ধৌত করা ফরজ।
***বিঃদ্রঃ ওযূ নামাজের চাবী আর নামাজ বেহেস্তের চাবী। কাজেই ওযূর জন্য নিয়ম পালন করা আবশ্যক।ইহার মধ্যে একটি অঙ্গ ছুটে গেলে বা একটি পশমের গোড়াও শুকনা থাকলে ওযূ শুদ্ধ হবে না।
ওযূর সুন্নত-সমূহ
অজুর করার সুন্নাত তরীকা
১.অজুর শুরুতে নিয়ত করা।
২.অজুর শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া সুন্নাত।
৩.অজুর অঙ্গগুলো ডান দিক থেকে ধোয়া শুরু করা।
৪.উভয় হাত পৃথক ভাবে কব্জিসহ তিনবার ধোয়া।
৫.মেসওয়াক করা।
৬.প্রত্যেকবার নতুন পানি নিয়ে তিনবার কুলি করা এবং রোযাদার না হলে গড়গড়া করা ।
৭.প্রত্যেকবার নতুন পানি নিয়ে তিনবার নাকের নরম জায়গায় পানি পৌঁছানো এবং বাম হাত দিয়ে নাক পরিস্কার করা ।
৮.সমস্ত মুখ তিনবার ধোয়া।
৯.মুখ ধোয়ার সময় আঙ্গুল দিয়ে দাঁড়ি খিলাল করা সুন্নাত।
১০.দুই হাত তিন বার ধোয়া সুন্নাত।
১১.হাত পা ধোয়ার সময় আঙ্গুলগুলো খিলাল করা।
১২.একবার সম্পূর্ণ মাথা মাসেহ করা।
১৩.মাথা মাসেহ করার সাথে সাথে কানও মাসেহ করা।
১৪.মাথার সামনের দিক থেকে মাসেহ শুরু করা।
১৫.গর্দান মাসেহ করা।
১৬.উভয় পা তিন বার ধোয়া।
১৭.পায়ের আঙ্গুল খেলাল করা।
১৮.অজুর সমস্ত অঙ্গ ডলে ডলে ধোয়া।
১৯.ধারাবাহিকভাবে অঙ্গুগুলো ধোয়া।
২০.সচল গতিতে অজু করা। অর্থাৎ এক অঙ্গ ধোয়ার পর আরেক অঙ্গ ধুতে দেরী না করা।
২১. অজুর মাঝে এ দোয়া পড়া সুন্নাত।
আরবি উচ্চারনঃاَللّٰهُمَّ اِغْفِرْلِيْ ذَنْبِيْ وَوَسِّعْ لِيْ فِيْ دَارِيْ وَبَارِكْ لِيْ فِيْ رِزْقِيْ
বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ!আমার গোনাহ মাফ করে দেন এবং আমার ঘর প্রশস্ত করে দেন এবং আমার রিজিকে বরকত দান করেন।
২২. অজু শেষ করার পর কালেমায়ে শাহাদাত পড়া সুন্নাত। ।
আরবি উচ্চারনঃ
اَشْهَدُ اَنْ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ وَ اَشْهَدُ اَ نَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَرَسُوْلُهٗ
২৩. কালেমায়ে শাহাদত পড়ার পর এই দোয়া পড়া।
আরবি উচ্চারনঃ
اَللّٰهُمَّ اجْعَلْنِيْ مِنَ التَّوَّابِيْنَ وَاجْعَلْنِيْ مِنَ الْمُتَطَهِّرِيْنَ
বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ!আপনি আমাকে তওবাকারীদের মধ্যে শামীল করুন এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের অন্তর্ভূক্ত করুন।
ওযূর মুস্তাহাব-সমূহ
১.অজুর নিয়ত মুখেঁ ও অন্তরে বলা।
২.প্রতি অঙ্গ ধোয়ার সময় বিসমিল্লাহ বলা।
৩.এমন উচু স্থানে বসে অজু করা যাতে পানি গড়িয়ে অন্য দিকে যায় এবং গায়ে ছিটা না পড়ে।
৪.কেবলার দিকে মুখ করে অজু করা।
৫.অজুর সময় অপরের সাহায্য না নেয়া।
৬.ডান হাতে পানি নিয়ে কুলি করা এবং নাকে পানি দেয়া।
৭.বাম হাত দিয়ে নাক সাফ করা।
৮.পা ধোয়ার সময় ডান হাতে পানি ঢালা এবং বাম হাতে ঘষে ধোয়া।
৯.অঙ্গ ধোয়ার সময় মসনূন দোয়া পড়া।
১০.অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ঘষে ঘষে ধোয়া যেন কোন স্থানে শুকনো না থাকে এবং ময়লা না থাকে।
১১.অযুর সময় আহেতক কথা না বলা।
১২.পানির অপচয় না করা।
১৩.কান ও ঘাড় মাছেহ করা
১৪.দাড়ি খিলাল করা।
১৫.উভয় কানের ছিদ্রে শাহাদাত আঙ্গুল প্রবেশ করানো।
১৬.অজুর শেষে কালিমায়ে শাহাদাত ও দোয়া পাঠ করা।
১৭.অজু করার পর দুই-রাকাআত তাহিয়্যাতুল অজুর নামাজ আদায় করা।
১৮.অজু শেষে একবার সূরা কদর পাঠ করা।
ওযূর মাকরুহ-সমূহ
১.মুখের মধ্যে জোরে পানি ছিটিয়ে দেয়া।
২.অজু ব্যতীত বাম হাত দ্বারা মুখে ও নাকে পানি দেয়া এবং ডান হাত দ্বারা নাক পরিস্কার করা।
৩.অজুর সময় বাজে কথা বলা।
৪.অজুর অঙ্গ সমূহ তিনবারের বেশি ধোঁয়া।
৫.যে পাত্রের মধ্যে নজর যায় না সেই পাত্র দ্বারা অজু করা।
৬.অজুর পানির মধ্যে ইচ্ছেকৃত-ভাবে থুথু ফেলা।
৭.অজুর ব্যতীত অপরের সাহয্যে অজু করা।
ওযূর ভঙ্গের কারণ-সমূহ
১.পায়খানা-প্রসাবের রাস্তা দিয়ে কোন কিছু বের হলে।
২.মুখ ভরে বমি করলে।
৩.শরীরের ক্ষতস্থান হতে রক্ত,পুঁজ বা পানি বের হয়ে গড়িয়ে পড়া।
৪.নামাজে উচ্চ-আওয়াজে হাসলে।
৫.পাগল,মাতাল বা অচেতন হওয়া।
৬.চিৎ,কাৎ বা হেলান দিয়ে ঘুম যাওয়া।
৭. থুথুর সঙ্গে রক্তের ভাগ সমান বা বেশি হওয়া।
৮. স্ত্রী-পুরুষ উভয়ে উলঙ্গাবস্থায় যদি উভয়ের লজ্জাস্থান শুধু স্পর্শ করে এবং ভিতরে না ঢুকায় অথবা বীযর্পাত না হয় তাতেও অজু ভঙ্গ হবে।
৯. নেশার বস্তু পান করে নেশা-গ্রস্ত বা মাতাল হলে।
ওযূর নিয়ত
আরবি-উচ্চারন
نَوَيْتُ اَنْ اَتَوَضَّاءَ لِرَفْعِ الْحَدَثِ وَاِسْتِبَاحَةَ لِّلصَّلَوةِ وَتَقَرُّباً اِلَى اللَّهِ تَعَا لَى
বাংলা-উচ্চারন
নাওয়াইতু আন্ আতাওয়াজ্জায়া লিরাফয়িল হাদাছি, ওয়াসতি বাহাতাললিচ্ছলাতি ওয়া তাকাররুবান ইল্লাল্লাহি তায়ালা।
বাংলা অর্থ
আমি পবিত্রতা অর্জন করা বা ইবাদাত করা অথবা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার জন্য অজু করছি ।
ওযূর দোয়া
আরবি-উচ্চারন
بِسْمِ اللهِ الْعَلِىِّ الْعَظِيْمِ، وَالْحَمدُ لِلَّهِ عَلَى دِيْنِ الاِْسْلاَمِ، اَلاِْسْلاَمُ حَقٌّ وَالْكُفْرُ بَـاطِلٌ، اَلاِْسْلاَمُ نُوْرٌ وَالْكُفْرُظُلْمَةٌ
বাংলা-উচ্চারন
বিছমিল্লাহিল আলিয়্যিল আজীম, আলহামদু লিল্লাহি আলা দ্বিনীল ইসলাম। আল ইসলামু হাককুও ওয়াল কুফরু বাতিলুন। আল ইসলামু নূরুও ওয়াল কুফরু জুলম্যতুন।
বাংলা অর্থ
মহান ও সর্ব সৃষ্টিকর্তার আল্লাহর পাকের নামে আরম্ভ করছি। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তায়ালারই জন্য যিনি আমাকে দ্বীন ইসলামের ওপর রেখেছেন। ইসলাম সত্য ও সঠিক এবং কুফুরি মিথ্যা। ইসলাম আলোকময় এবং কুফুরি অন্ধকারাচ্ছন্ন।
ওজু শেষের দোয়া
আরবি-উচ্চারন
اَشْهَدُ اَنْ لآَّ اِلَهَ اِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَشَرِيْكَ لَهُ وَاَشَْْهَدُ اَنََّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ
বাংলা-উচ্চারন
আশহাদু আল্লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ।
বাংলা অর্থ
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে-আল্লাহ ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই। আমি আর ও সাক্ষ্য দিচ্ছি,মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসুল।