এ লেখাটি পাঠ করে আপনারা যা শিখবেন, তা হলঃ অনুচ্ছেদ রচনা কি? অনুচ্ছেদ রচনার প্রয়োজনীয়তা, অনুচ্ছেদের প্রকারভেদ। একটি অনুচ্ছেদ রচনার উদাহরণ। তো চলুন শুরু করা যাক।
![]() |
অনুচ্ছেদ কি? অনুচ্ছেদ রচনা লেখার নিয়ম,বৈশিষ্ট্য ও প্রকারভেদ। |
অনুচ্ছেদ রচনা কি বা কাকে বলে?
অনুচ্ছেদ রচনার প্রয়োজনীয়তা
অনুচ্ছেদ রচনা কত প্রকার?
- বস্তুনিষ্ঠ প্রবন্ধ ও
- ব্যক্তিগত প্রবন্ধ।
অনুচ্ছেদ যেহেতু প্রবন্ধেরই একেবারে সংক্ষিপ্ত রূপ, সেহেতু অনুচ্ছেদকেও প্রাথমিকভাবে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা :
ক. বস্তুনিষ্ঠ অনুচ্ছেদ
খ. ব্যক্তিগত অনুচ্ছেদ
যে অনুচ্ছেদে বিষয়বস্তুর প্রাধান্য থাকে তাকে বলা যায় বস্তুনিষ্ঠ অনুচ্ছেদ। রচয়িতার পাণ্ডিত্য, জ্ঞানের গভীরতা ও অনন্যসাধারণ চিন্তাশীলতা এ জাতীয় অনুচ্ছেদের মধ্যে প্রকাশ পায়।
পক্ষান্তরে ব্যক্তিগত অনুচ্ছেদে হাস্যরস ও আনন্দ উচ্ছ্বাসের মাধ্যমে লেখক পাঠকের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যান। বস্তুনিষ্ঠ অনুচ্ছেদের নিম্নোক্ত বিষয়বস্তু হতে পারে-
১. সমকালীন জীবন
২. চলমান পরিবেশ
৩. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
৪. জাতীয় সমস্যা বলি
৫. আর্থসামাজিক অবস্থা
৬. সাহিত্য-সংস্কৃতি ও শিক্ষা
৭. উপদেশ ও নীতিকথা
বাংলা অনুচ্ছেদ রচনার বৈশিষ্ট্যসমূহ
১. বাংলা অনুচ্ছেদ কেবলমাত্র একটি প্যারায় সীমাবদ্ধতা থাকে।
২. অনুচ্ছেদ রচনার প্রতিটি বাক্যই গুরুত্বপূর্ণ।
৩. অনুচ্ছেদের প্রতিটি বাক্য পরস্পর সম্পর্কিত থাকে।
বাংলা অনুচ্ছেদ রচনা লেখার নিয়ম
শিক্ষার্থীদের জন্যে অনুচ্ছেদ রচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই এ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। অনুচ্ছেদ রচনার সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মনে রাখতে হবেঃ
১। অনুচ্ছেদে বাক্যের সংখ্যা হবে অল্প। ২০টি বাক্যের বেশি না হওয়াই ভালো।
২। প্রত্যেকটি বাক্যের মধ্যে অর্থপূর্ণ সঙ্গতি থাকবে। অসঙ্গত বাক্যের প্রয়োগ বাঞ্ছনীয় নয়।
৩। লেখার মধ্যে কখনো মূলভাব থেকে দূরে সরে যাওয়া যাবে না। মূলকথা তুলে ধরাই অনুচ্ছেদ রচনার পূর্বশর্ত।
৪। অনুচ্ছেদের বক্তব্য সহজ-সরল ভাষায় প্রকাশ করতে হবে। দুর্বোধ্য বা অপ্রচলিত শব্দ ব্যবহার করা উচিত নয়।
৫। হাতের লেখা সুন্দর করার চেষ্টা থাকতে হবে। অস্পষ্ট বা সৌন্দর্যহীন দেখায় নম্বর কমে যেতে পারে।
৬। বাক্যের মধ্যে প্রতিটি শব্দ স্পষ্ট করে লিখতে হবে এবং অপ্রয়োজনীয় শব্দ ব্যবহার না করাই উত্তম।
৭। বানান ভুল যাতে না হয় সেদিকে সচেতন দৃষ্টি রাখতে হবে।
৮। যে বিষয়ে অনুচ্ছেদ লিখতে হবে, লেখা শুরু করার আগেই সে বিষয় সম্পর্কে ভালোভাবে চিন্তা করে নিতে হবে।
৯। সাধু ও চলিত ভাষা একই সঙ্গে ব্যবহার করা যাবে না। একটি অনুচ্ছেদে সাধু বা চলিত এর যেকোনো একটি ভাষারীতি ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে চলিত ভাষা ব্যবহার করাই উত্তম।
১০। অনুচ্ছেদের শুরুতে শিরোনাম, তারপর অতি সংক্ষেপে সূচনা (না থাকলেও চলে), এরপর মূলবক্তব্য এবং মন্তব্য থাকবে। অনুচ্ছেদ মূলত কোনো নির্দিষ্ট ভাবকে কেন্দ্র করে রচিত হয় বলে সূচনা ও মন্তব্য প্রয়োজন হয় না। মূলবক্তব্যেই ভাব পরিপূর্ণতা লাভ করে।
একটি অনুচ্ছেদ রচনার উদাহরণ
অনুচ্ছেদ রচনাঃ একটি শীতের সকাল
শীতের সকাল যেন সন্ন্যাসীর মতো কুয়াশার চাদর গায়ে দিয়ে নীরবে চলে আসে। শহরের আবাসিক এলাকায় বড় বড় দালানকোঠার কারণে তেমন বোঝা না গেলেও গ্রামীণ পরিবেশে শীত-সকাদের অনুভূতিটাই আলাদা। এবারের শীতে আমি গ্রামের বাড়িতে ছিলাম। শীতের সকালের রোদমাখা প্রকৃতির রূপ সকলেরই প্রিয়। ঘন কুয়াশায় ঢেকে যায় চারদিক। কুয়াশা ভেদ করে সূর্যের আলো আর উত্তাপ আসতে একটু সময় লাগে। সূর্যের হলুদবরণ কিরণ ছড়িয়ে পড়লে এক অপরূপ দৃশ্যের সূচনা হয়। সকালের সৌন্দর্য মনকে নাড়া দিয়ে যায়। সকালে মামা আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলতেই দেখি, শিশু-কিশোর, ছেলে-বুড়ো অনেকেই গরম কাপড় গায়ে দিয়ে আঙিনায় জড়ো হয়েছে। নাড়ার আগুন জ্বালিয়ে চারপাশে গোল হয়ে বসেছে। আগুনের তাপে শীত নিবারণ করছে তারা। আমিও যোগ দিলাম তাদের সাথে। আমার চোখে পড়ে পাশেই ঘাসের ওপর চিকচিক করছে শিশির বিন্দু। মুক্তো দানার মতো। মাঠের দিকে যাচ্ছে ফসল কাটার জন্যে, আর ঠক ঠক করে কাঁপছে। তাদের কাঁপুনি দেখে আগুনের কাছে বসেও আমার মধ্যে জেগে ওঠে শীতের অনুভূতি। গাছের পাতায় পাতায় শিশির এবং নবোদিত সূর্যের আলোর খেলা। গাছের পাতা থেকে টপ টপ করে শিশির ফোটা ঝরছিল টিনের চালে। এদিকে ছোট কাকা নিয়ে এলেন খেজুরের রস আর ওদিকে পিঠা তৈরি করে ডাকছেন দাদি। শীতের সকালে দুটোই অতুলনীয় খাদ্য। এক গ্লাস খেজুর রস খেয়ে ছুটে গিয়ে দাদির পিঠার কাছে বসলাম। সকালের ঠাণ্ডায় চুলার কাছে বসে গরম গরম পিঠা খাওয়ার আনন্দই আলাদা। শীত-সকালের এমন সুখকর অনুভূতি আমি এর আগে আর কখনো পাইনি। আবহমান বাংলার সংস্কৃতির ঐতিহ্যে লালিত এই গ্রামীণ জীবনের শীতের একটি সকাল উপভোগ করে আমি ধন্য।