গোসলের নিয়ম, গোসল কত প্রকার ও ফরজ কয়টি?

গোসলের নিয়ম, গোসল কত প্রকার ও ফরজ কয়টি?
ইসলামের পরিভাষায়, গোসল হল সমস্ত দেহ ধৌত করার মাধ্যমে পূর্ণ পবিত্রতা অর্জনের একটি পন্থা।
আজ আমরা জানব, গোসল কি? গোসল কত প্রকার? গোসলের নিয়ত ও গোসল ফরজ কয়টি?

গোসল কি?

ইসলামের পরিভাষায়, গোসল হল সমস্ত দেহ ধৌত করার মাধ্যমে পূর্ণ পবিত্রতা অর্জনের একটি পন্থা।

 কথিপয় ধর্মীয় উপাসনা এবং আচার-আনুষ্ঠান পালনের পূর্বশর্ত হচ্ছে গোসল। সকল প্রাপ্তবয়স্ক মোসলমান নর-নারীর যৌনসঙ্গম , যৌনস্থলন (যেমন : বির্যপাত), রজস্রাবঃ সমাপ্তির পর, সন্তান প্রসবের পর এবং স্বাভাবিক কারণে মৃত্যুর পর গোসল করা ফরজ (বাধ্যতামূলক) হয়। 

তাছাড়া, শুক্রবার জুম্মার নামাজের পূর্বে, ঈদের নামাজের পূর্বে, এহরামের পূর্বে, হজ্জের জন্য প্রস্তুত হওয়ার সময়,অজ্ঞান হওয়ার পর সচেতন হলে অথবা আনুষ্ঠানিকভাবে কেঊ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পূর্বে গোসল করা মুস্তাহাব (উৎসাহিত করা হয়)। শিয়া মতে, তওবার নামাযের পূর্বে গোসল করতে হয়।

গোসল চার-প্রকার
গোসল কত প্রকার

গোসল চার-প্রকার

গোসল চার-প্রকার যেমনঃ

১.ফরজ গোসল।

২.ওয়াজিব গোসল।

৩.সুন্নাত গোসল।

৪.মুস্তাহাব গোসল।

১.ফরজ গোসল 

যে সব কারনে  ফরজ গোসল হয় এর কারণসমূহঃ

১. জাগ্রত বা নিদ্রা অবস্থায় উত্তেজনার সাথে বীর্যপাত হওয়া। 

২. স্বপ্ন দোষ হয়ে যদি বীর্য পাত হয়।   

৩. স্ত্রী সহবাস করার দ্বারা গোসল ফরজ হয়।  

৪. নারীদের ঋতু (হায়েজ-মিনস) বা নেফাস (সন্তান প্রসোবত্তোর স্রাব) হওয়া।   

২. ওয়াজিব গোসল 

যে সব কারনে  ওয়াজিব গোসল হয় এর কারণসমূহঃ

১. মৃত ব্যক্তির গোসল জীবিতদের জন্য ওয়াজিব হয়। 

২. কাফের নাপাক শরীর মুসলমান হতে চাইলে এর আগে গোসল করা ওয়াজিব।

৩. ছেলেদের স্বপ্নদোষ মেয়েদের ঋতুস্রাব দ্বারা বালেগ হলে গোসল করা ওয়াজিব।

৪. বিধর্মী স্ত্রীলোক ঋতু বা নেফাছ বন্ধ হওয়ার পর মুসলমান হতে চাইলে  গোসল করা ওয়াজিব।  

৩.সুন্নাত গোসল

যে সব কারনে  সুন্নাত গোসল হয় এর কারণসমূহঃ

১. জুমার নামাজের জন্য গোসল করা।

২. দুই ঈদের নামাজের জন্য গোসল করা।

৩. ইহরামের পূর্বে গোসল করা।

৪. আরাফার ময়দানে অবস্থানের আগে গোসল করা।

৪.মুস্তাহাব গোসল 

যে সব কারনে মুস্তাহাব গোসল হয় এর কারণসমূহঃ

১. শাবানের পনের তারিখ রাতে। 

২. কদরের রাতে। 

৩. গোনাহ থেকে তওবা করার পূর্বে।

৪. সফর থেকে ফিরে আসলে। 

৫. মদিনা মুনাওয়ারায় প্রবেশের পূর্বে।

৬. মক্কা মুকাররমায় প্রবেশের পুর্বে।

৭. মুজদালিফায় যাওয়ার পূর্বে।

৮. তওয়াফে যিয়ারতের পূর্বে।

৯. মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়ার পরে।

১০.  নতুন কাপড় পরিধানের পূর্বে।

১১. অতিরিক্ত গরম পরলে।

১২. চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণের নামাজের জন্য। 

১৩. এস্তেসকা (বৃষ্টির) নামাজের জন্য।

১৪. ভয় পেলে। 

১৫. পাগলামী থেকে সুস্থ্য হলে। 

১৬. বেহুঁশ কিংবা মাতাল ব্যক্তি হুঁশ হওয়ার পর। 

১৭.পবিত্র অবস্থায় ইসলাম গ্রহণ করার পর গোসল করা মুস্তাহাব। তবে নাপাক অবস্থায় ইসলাম গ্রহণ করলে গোসল করা ওয়াজিব।  

১৮.প্রবল বাতাস প্রবাহিত হওয়ার সময়। 

১৯ অধিক অন্ধকারের সময়। (জামেউস সুনান, ফিকহুল মুয়াস্সার).

গোসলের নিয়ত
গোসলের নিয়ত
গোসলের নিয়ত

আরবি-উচ্চারন

  • نَوَيْتُ الْغُسْلَ لِرَفْعِ الْجَنَابَةِ

বাংলা-উচ্চারন

  • নাওয়াইতুল গুসলা লিরাফয়ি’ল্ জানাবাতি।

বাংলা অর্থ

  • আমি নাপাকি দূর করিবার জন্য গোসলের নিয়ত করিতেছি।

গোসলের মধ্যে তিনটি ফরজ
গোসলের মধ্যে তিনটি ফরজ

গোসল সুন্নত কয়টি

গোসলের সুন্নত-ছয়টি


গোসলের মধ্যে সুন্নত ছয়টি -যথাঃ

১. উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করা।

২. শরীরের কোথায়ও নাপাকি থাকিলে উহা ধৌত করা।

৩. লজ্জাস্থান ভাল করিয়া ধৌত করা। 

৪. অজু করা।

৫. প্রত্যেক অঙ্গ তিনবার করিয়া ধৌত করা এবং

৬. গোসলের পরে গোসলের স্থান হইতে একটু সরিয়া যাইয়া দুই পা ধৌত করা।

গোসল ফরজ কয়টি

গোসলের মধ্যে তিনটি ফরজ -যথাঃ

১.গড়গড়ার সহিত কুলি করা কিন্তু রোজা রাখাবস্থায় গড়গড়া করা নিষেধ। 

২.নাকের ভিতরের নরম স্থান পর্যন্ত পানি পৌঁছাইয়া উত্তমরূপে নাক পরিষ্কার করা। 

৩.মাথা হইতে পা পর্যন্ত সমস্ত শরীরে পানি পৌঁছাইয়া ধৌত করা।

***বিঃদ্রঃ উপরোক্ত তিনটি ফরজ কাজের মধ্যে একটিও ছুটিয়া গেলে কিংবা শরীরের একটি পশমের গোসালী শুকনা থাকিলে গোসল শুদ্ধ হইবে না।

লিখাটি উপকারে আসলে, আপনার ভাই, বোন বা যে কাউকে শেয়ার করতে পারেন। যেন তাদের গোসলও শুদ্ধ হয়।

Post a Comment

Previous Post Next Post