থার্মিস্টর: বৈশিষ্ট্য, ব্যবহার, ‍সুবিধা-অসুবিধা এবং কীভাবে কাজ করে?

থার্মিস্টর
থার্মিস্টর

থার্মিস্টর কি?

থার্মিস্টর একটি নেগেটিভ টেম্পারেচার কো-ইফিসিয়েন্ট পদার্থ, যার রেজিস্টিভিটি ব্যস্তানুপাতিকভাবে পরিবর্তিত হয়। একে সাধারণত তাপমাত্রা পরিমাপের কাজে ব্যবহার করা হয়। এটি এক ধরনের সেমিকন্ডাক্টর, যা মেটালিক অক্সাইড, যথা- ম্যাঙ্গানিজ, নিকেল, কোবাল্ট, কপার এবং ইউট্রাম-এর সঠিক সমন্বয়ে গঠন করা হয়। এটি রাসায়নিকভাবে নিষ্ক্রিয়। থার্মিস্টরকে সিরিজ প্যারালাল ব্যবস্থাপনায় ব্যবহার করা যায়।

থার্মিস্টরসমূহের বৈশিষ্ট্য

(i) থার্মিস্টরের রেজিস্ট্যান্স 0.5Ω থেকে 0.75Ω পর্যন্ত। বিডস (Beads) টাইপ থার্মিস্টর সবচেয়ে ছোট আকৃতির। এটি সাধারণত 0.15mm ব্যাসের হয়। এটি গ্লাসের প্রলেপের ভিতর আবদ্ধ (Sealed) থাকে।

(ii) প্রোব (Probe) টাইপ থার্মিস্টর গ্লাস প্রোবে আবদ্ধ থাকে। গ্লাস প্রোবের ব্যাস 2.5mm এবং দৈর্ঘ্য (6–50) mm প্রোব টাইপ থামিস্টর তরলের তাপমাত্রা পরিমাপে ব্যবহৃত হয়। এদের রেজিস্ট্যান্স 300Ω থেকে 100MΩ.

(iii) খুব উচ্চ চাপে ধাতুকে চাপ দিয়ে চেপ্টা সিলিন্ড্রিক্যাল আকৃতিতে ডিস্ক (Disc) টাইপ থার্মিস্টর তৈরি হয়। এদের ব্যাস 2.5mm থেকে 25mm.

(iv) রড (Rod) টাইপ একটি ছাঁচের (Dies) মাধ্যমে লম্বা সিলিণ্ডুিক্যাল আকৃতির এটি। এটির লিডগুলোকে রডের প্রান্তে যুক্ত করা হয়। এরা 1.25, 27.5 এবং 4.25mm ইত্যাদি ব্যাসের হয়ে থাকে এবং দৈর্ঘ্য (12.5-50)mm। এদের রেজিস্ট্যান্স (1-50) kΩ.

রড টাইপ থার্মিস্টরের সুবিধা বেশি কারণ খুব উচ্চ রেজিস্টিভিটির জন্য এদের শক্তি সঞ্চালন (Power handling) সামর্থ্য সবচেয়ে বেশি। 

থার্মিস্টরের কার্যপ্রণালী

এখানে একটি ড্রাইভার ট্রানজিস্টর-এর বেইস বায়াসকে থার্মিস্টর দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। অর্থাৎ, এর আড়াআড়িতে ভোল্টেজ ড্রপই বেস বায়াস হিসেবে কাজ করে। থার্মিস্টরকে হিটার বা চুল্লির সংস্পর্শে রাখা হয়। যখন চুল্লির (Oven) তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় তখন থার্মিস্টরের তাপমাত্রাও বৃদ্ধি পায়, ফলে এর রেজিস্টিভিটি কমে যায়। এতে থামিস্টরের আড়াআড়িতে ভোল্টেজে বা ট্রানজিস্টরের বেস বায়াস কমে যাওয়ায় হিটার কয়েলের মধ্য দিয়ে কম পরিমাণ কারেন্ট প্রবাহিত হয় এবং চুল্লির (Oven) তাপমাত্রা কমে আসে। যদি কোনো কারণে তাপমাত্রা কমে যায় তাহলে থার্মিস্টরের রেজিস্টিভিটি বৃদ্ধি পায় ফলে ট্রান্সজিস্টরের বেস বায়াস বৃদ্ধি পাওয়ায় হিটার কয়েল এর মধ্য দিয়ে বেশি পরিমাণ কারেন্ট প্রবাহিত হয়, ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। সুতরাং একটি থার্মিস্টরের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কোনো হিটারের তাপমাত্রা পরিমাপ ও নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

থার্মিস্টরের সুবিধা ও অসুবিধা

সুবিধা (Advantages):

  1.  থার্মিস্টরের রেজিস্ট্যান্স খুব বেশি (0.5Ω–100) MΩ তাই এর লিড রেজিস্ট্যান্স খুব নগণ্য মনে করা হয়।
  2. এর তৈরি খরচ কম।
  3. এটি কম মানের তাপমাত্রা (- 100°C to 400°C) পরিমাপের জন্য খুবই উপযোগী
  4. থার্মিস্টর আকারে অত্যন্ত ছোট।
  5. এর রেসপন্স খুব ভালো।
  6. এর স্ট্যাবিলিটি খুব ভালো।

অসুবিধা (Disadvantages):

  1. এটি 400°C-এর উপরের তাপমাত্রার জন্য উপযোগী নয়।
  2. তাপমাত্রা বনাম রেজিস্ট্যান্স কার্ড নন-লিনিয়ার।
  3. এর ব্যবহার প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে খুবই সীমিত

থার্মিস্টরের ব্যবহার

অ্যাকুরেসি এবং রেজোলুশন ভালো হওয়ায় তাপমাত্রা পরিমাপের ক্ষেত্রসমূহে থার্মিস্টর বহুল ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়াও নিম্নলিখিত ক্ষেত্রসমূহে থার্মিস্টর ব্যবহৃত হয়-

  • হাই-ফ্রিকুয়েন্সি পাওয়ার পরিমাপে থার্মিস্টর ব্যবহার করা হয়, 
  • থার্মাল কন্ডাক্টিভিটি পরিমাপে থার্মিস্টর ব্যবহার করা হয়,
  • তরলে লেভেল, ফ্লো, প্রেসার পরিমাপে থার্মিস্টর ব্যবহার করা হয়,
  • ইলেকট্রনিক সার্কিটে ডিভাইসের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থার্মিস্টর ব্যবহার করা হয়।

আরও পড়ুন >>

Post a Comment

Previous Post Next Post